Wednesday, October 30, 2013

Excellent Story In Bangla

If you want to read some excellent Story in bangla, you can visit SOTTOMITTHA . It carry different type story , article which give a beautiful look to see people , also remove monotonous in our life . It contains many kind of quiz that answer is ease but you must think a little.

http://www.sottomittha.blogspot.com

Thursday, October 24, 2013

আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে – রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ

আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে ,
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে।

ঢেকে রাখে যেমন কুসুম, পাপড়ির আবডালে ফসলের ঘুম।
তেমনি তোমার নিবিঢ় চলা, মরমের মূল পথ ধরে।

পুষে রাখে যেমন কুসুম, খোলসের আবরণে মুক্তোর ঘুম।
তেমনি তোমার গভীর ছোঁয়া, ভিতরের নীল বন্দরে।

ভাল আছি ভাল থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো।
দিয়ো তোমার মালাখানি, বাউলের এই মনটারে।
আমার ভিতরে বাহিরে………

ভালবাসার সময় তো নেই – রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ

ভালবাসার সময় তো নেই
ব্যস্ত ভীষন কাজে,
হাত রেখো না বুকের গাড় ভাজে।

ঘামের জলে ভিজে সাবাড়
করাল রৌদ্দুরে,
কাছএ পাই না, হৃদয়- রোদ দূরে।

কাজের মাঝে দিন কেটে যায়
কাজের কোলাহল
তৃষ্নাকে ছোয় ঘড়ায় তোলা জল।

নদী আমার বয় না পাশে
স্রোতের দেখা নেই,
আটকে রাখে গেরস্থালির লেই।

তোমার দিকে ফিরবো কখন
বন্দী আমার চোখ
পাহারা দেয় খল সামাজিক নখ।

চায়ের দোকানে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

লণ্ডনে আছে লাস্ট বেঞ্চির ভীরু পরিমল,
রথীন এখন সাহিত্যে এক পরমহংস
দীপু তো শুনেছি খুলেছে বিরাট কাগজের কল
এবং পাঁচটা চায়ের বাগানে দশআনি অংশ
তদুপরি অবসর পেলে হয় স্বদেশসেবক;

আড়াই ডজন আরশোলা ছেড়ে ক্লাস ভেঙেছিল পাগলা অমল
সে আজ হয়েছে মস্ত অধ্যাপক!
কি ভয়ংকর উজ্জ্বল ছিল সত্যশরণ
সে কেন নিজের কণ্ঠ কাটলো ঝকঝকে ক্ষুরে -
এখনো ছবিটি চোখে ভাসলেই জাগে শিহরণ
দূরে চলে যাবে জানতাম, তবু এতখানি দূরে ?

গলির চায়ের দোকানে এখন আর কেউ নেই
একদা এখানে সকলে আমরা স্বপ্নে জেগেছিলাম
এক বালিকার প্রণয়ে ডুবেছি এক সাথে মিলে পঞ্চজনেই
আজ এমনকি মনে নেই সেই মেয়েটিরও নাম।

নীরা ও জীরো আওয়ার– সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

এখন অসুখ নেই, এখন অসুখ থেকে সেরে উঠে
পরবর্তী অসুখের জন্য বসে থাকা। এখন মাথার কাছে
জানলা নেই, বুক ভরা দুই জানলা, শুধু শুকনো চোখ
দেয়ালে বিশ্রাম করে, কপালে জলপট্টির মতো
ঠাণ্ডা হাত দূরে সরে গেছে, আজ এই বিষম সকালবেলা
আমার উত্থান নেই, আমি শুয়ে থাকি, সাড়ে দশটা বেজে যায়।

প্রবন্ধ ও রম্যরচনা, অনুবাদ, পাঁচ বছর আগের
শুরু করা উপন্যাস, সংবাদপত্রের জন্য জল-মেশানো
গদ্য থেকে আজ এই সাড়ে দশটায় আমি সব ভেঙেচুরে
উঠে দাঁড়াতে চাই–অন্ধ চোখ, ছোট চুল–ইস্ত্রিকরা পোশাক ও
হাতের শৃঙ্খল ছিঁড়ে ফেলে আমি এখন তোমার
বাড়ির সামনে, নীরা থুক্‌ করে মাটিতে থুতু ছিটিয়ে‌
বলি : এই প্রাসাদ একদিন আমি ভেঙে ফেলবো! এই প্রাসাদে
এক ভারতবর্ষব্যাপী অন্যায়। এখান থেকে পুনরায় রাজতন্ত্রের
উৎস। আমি
ব্রীজের নিচে বসে গম্ভীর আওয়াজ শুনেছি, একদিন
আমূলভাবে উপড়ে নিতে হবে অপবিত্র সফলতা।

কবিতায় ছোট দুঃখ, ফিরে গিয়ে দেখেছি বহুবার
আমার নতুন কবিতা এই রকম ভাবে শুরু হয় :
নীরা, তোমায় একটি রঙিন
সাবান উপহার
দিয়েছি শেষবার;
আমার সাবান ঘুরবে তোমার সারা দেশে।
বুক পেরিয়ে নাভির কাছে মায়া স্নেহে
আদর করবে, রহস্যময় হাসির শব্দে
ক্ষয়ে যাবে, বলবে তোমার শরীর যেন
অমর না হয়…

অসহ্য! কলম ছুঁড়ে বেরিয়ে আমি বহুদূর সমুদ্রে
চলে যাই, অন্ধকারে স্নান করি হাঙর-শিশুদের সঙ্গে
ফিরে এসে ঘুম চোখ, টেবিলের ওপাশে দুই বালিকার
মতো নারী, আমি নীল-লোভী তাতার বা কালো ঈশ্বর-খোঁজা
নিগ্রোদের মতো অভিমান করি, অভিমানের স্পষ্ট
শব্দ, আমার চা-মেশানো ভদ্রতা হলুদ হয়!

এখন, আমি বন্ধুর সঙ্গে সাহাবাবুদের দোকানে, এখন
বন্ধুর শরীরে ইঞ্জেকশন ফুঁড়লে আমার কষ্ট, এখন
আমি প্রবীণ কবির সুন্দর মুখ থেকে লোমশ ভ্রুকুটি
জানু পেতে ভিক্ষা করি, আমার ক্রোধ ও হাহাকার ঘরের
সিলিং ছুঁয়ে আবার মাটিতে ফিরে আসে, এখন সাহেব বাড়ীর
পার্টিতে আমি ফরিদপুরের ছেলে, ভালো পোষাক পরার লোভ
সমেত কাদা মাখা পায়ে কুৎসিত শ্বেতাঙ্গিনীকে দু’পাটি
দাঁত খুলে আমার আলজিভ দেখাই, এখানে কেউ আমার
নিম্নশরীরের যন্ত্রনার কথা জানে না। ডিনারের আগে
১৪ মিনিটের ছবিতে হোয়াইট ও ম্যাকডেভিড মহাশূন্যে
উড়ে যায়, উন্মাদ! উন্মাদ! এক স্লাইস পৃথিবী দূরে,
সোনার রজ্জুতে
বাঁধা একজন ত্রিশঙ্কু। কিন্তু আমি প্রধান কবিতা
পেয়ে গেছি প্রথমেই, ৯, ৮, ৭, ৬, ৫…থেকে ক্রমশ শূন্যে
এসে স্তব্ধ অসময়, উলটোদিকে ফিরে গিয়ে এই সেই মহাশূন্য,
সহস্র সূর্যের বিস্ফোরণের সামনে দাঁড়িয়ে ওপেনহাইমার
প্রথম এই বিপরীত অঙ্ক গুনেছিল ভগবৎ গীতা আউড়িয়ে?
কেউ শূন্যে ওঠে কেউ শূন্যে নামে, এই প্রথম আমার মৃত্যু
ও অমরত্বের ভয় কেটে যায়, আমি হেসে বন্দনা করি :
ওঁ শান্তি! হে বিপরীত সাম্প্রতিক গণিতের বীজ
তুমি ধন্য, তুমি ইয়ার্কি, অজ্ঞান হবার আগে তুমি সশব্দ
অভ্যুত্থান, তুমি নেশা, তুমি নীরা, তুমিই আমার ব্যক্তিগত
পাপমুক্তি। আমি আজ পৃথিবীর উদ্ধারের যোগ্য

নীরার পাশে তিনটি ছায়া – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

নীরা এবং নীরার পাশে তিনটি ছায়া
আমি ধনুকে তীর জুড়েছি, ছায়া তবুও এত বেহায়া
পাশ ছাড়ে না
এবার ছিলা সমুদ্যত, হানবো তীর ঝড়ের মতো–
নীরা দু’হাত তুলে বললো, ‘মা নিষাদ!
ওরা আমার বিষম চেনা!’
ঘূর্ণি ধুলোর সঙ্গে ওড়ে আমার বুক চাপা বিষাদ–
লঘু প্রকোপে হাসলো নীরা, সঙ্গে ছায়া-অভিমানীরা
ফেরানো তীর দৃষ্টি ছুঁয়ে মিলিয়ে গেল
নীরা জানে না!

জয়ী নই, পরাজিত নই – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

পাহাড়-চুড়ায় দাঁড়িয়ে মনে হয়েছিল
আমি এই পৃথিবীকে পদতলে রেখেছি
এই আক্ষরিক সত্যের কছে যুক্তি মূর্ছা যায়।
শিহরিত নির্জনতার মধ্যে বুক টন্‌‌টন করে ওঠে
হাল্‌কা মেঘের উপচ্ছায়ায় একটি ম্লান দিন
সবুজকে ধূসর হতে ডাকে
আ-দিগন্ত প্রান্তের ও টুকরো ছড়ানো টিলার উপর দিয়ে
ভেসে যায় অনৈতিহাসিক হাওয়া
অরণ্য আনে না কোনো কস্তুরীর ঘ্রাণ
কিছু নিচে ছুটন্ত মহিলার গোলাপি রুমাল উড়ে গিয়ে পড়ে
ফণমনসার ঝোপে
নিঃশব্দ পায়ে চলে যায় খরগোশ আর রোদ্দুর।

এই যে মুহূর্তে, এই যে দাঁড়িয়ে থাকা–এ‌র কোনো অর্থ নেই
ঝর্নার জলে ভেসে যায় সম্রাটের শিরস্ত্রাণ
কমলার কোয়া থেকে খসে পড়া বীজ ঢুকে পড়ে পাতাল গর্ভে
পোল্‌কা ডট্‌ দুটি প্রজাপতি তাদের আপন আপন কাজে ব্যস্ত
বাব্‌‌লা গাছের শুক্‌নো কাঁটাও দাবী করেছে প্রকৃতির প্রতিনিধিত্ব।
সব দৃশ্যই এমন নিরপেক্ষ
আমি জয়ী নই, আমি পরাজিত নই, আমি এমনই একজন মানুষ
পাহাড় চূড়ায় পৃথিবীকে পদতলে রেখে, আমার নাভিমূল
থেকে উঠে আসে বিষণ্ন, ক্লান্ত দীর্ঘশ্বাস
এই নির্জনতাই আমার ক্ষমাপ্রার্থী অশ্রুমোচনের মুহূর্ত।।

যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে - রবীন্দ্র সংগীত

যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে।
একলা চলো, একলা চলো, একলা চলো, একলা চলো রে॥
যদি কেউ কথা না কয়, ওরে ওরে ও অভাগা,
যদি সবাই থাকে মুখ ফিরায়ে সবাই করে ভয়—
তবে পরান খুলে
ও তুই মুখ ফুটে তোর মনের কথা একলা বলো রে॥
যদি সবাই ফিরে যায় , ওরে ওরে ও অভাগা,
যদি গহন পথে যাবার কালে কেউ ফিরে না চায়—
তবে পথের কাঁটা
ও তুই রক্তমাখা চরণতলে একলা দলো রে॥
যদি আলো না ধরে, ওরে ওরে ও অভাগা,
যদি ঝড়-বাদলে আঁধার রাতে দুয়ার দেয় ঘরে—
তবে বজ্রানলে
আপন বুকের পাঁজর জ্বালিয়ে নিয়ে একলা জ্বলো রে॥

আকাশ ও মানুষ – নির্মলেন্দু গুণ

কবে থেকে আকাশ দাঁড়িয়ে আছে একা,
তার বুক থেকে খসে পড়েছে কত তারা।
বেঁচে থাকলে আরো কত তারাই খসবে,
তা নিয়ে আকাশ কি দুঃখ করতে বসবে?

না, বসবে না, আমি বলছি, লিখে নাও,
আকাশকে তো মহান মানি এ-কারণেই।
মনুষ্যবৎ হলে কি মানুষ তাকে মানতো?

প্রিয়জন চলে গেলে মানুষই ব্যথিত হয়,
আকাশ নির্বিকার, আকাশ কখনও নয়।
তোমরা মানুষ, তাই সহজেই দুঃখ পাও,
হে ঈশ্বর, আমাকে আকাশ করে দাও।

অনন্ত বরফবীথি – নির্মলেন্দু গুণ

মৃত্যুর পর তোমরা আমাকে কংশের জলে ভাসিয়ে দিও।
যদি শিমুলের তুলা হতাম, বাতাসে উড়িয়ে দিতে বলতাম,
কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য, আমি বাতাসের চেয়ে হালকা নই।
আমাকে তোমরা কাঠের আগুনে পুড়িয়ে ফেলো না,
কিংবা মাটি খুঁড়ে কবর দিও না আজিমপুর বা বনানীতে।
বর্জ্যপদার্থের মতো আমি চাই না মাটিতে মিশে যেতে।
মৃত্যুর পর তোমরা আমাকে কংশের জলে ভাসিয়ে দিও।
যাতে জলপথে ভাসতে-ভাসতে, ভাসতে-ভাসতে
আমি পৌঁছুতে পারি পৃথিবীর নব-নব দেশে।

জাপান-সাগরের মালবাহী জাহাজের সাথে পাল্লা দিয়ে
আমি ঢেউয়ের চূড়ায় ভেসে বেড়াবো, প্রাণহীন রাজর্হাস।
তার আগে ডান দিকে ঘুরে, আমি একটু বিশ্রাম নেবো
সিডনি বন্দরে, যদি সেখানে হঠাৎ মৈত্রেয়ীর দেখা পাই।
ভারত বনাম নিউজীল্যাণ্ডের একদিনের ক্রিকেট ম্যাচ
দেখতে আমি দু’দিনের জন্য থামবো ডুনেডিনে।
একরাত্রির জন্য ইচ্ছে আছে সায়গন নদীতে যাবার।
রেড রিভারে রঙিন মাছের সঙ্গে খেলা করবো এক দিন।
একদিন লস এঞ্জেলেসে হঠাৎ চুম্বন হয়ে ভেসে উঠবো
এক প্রিয়দর্শিনী নাসিমার হাসিমাখা মুখের লজ্জায়।
তারপর কোনো এক গভীর নিশিথে আমি ধরা পড়বো
ক্যালিফোর্নিয়ায়, সান ডি আগোর বৃদ্ধ জেলের জালে।

বলিভিয়ার জঙ্গলে ক্ষিপ্র-চিতার হরিণ শিকার দেখবো
একদিন, একদিন পেরুর অরণ্যঘেরা নির্জন দ্বীপে যাবো,
একদিন অলিভিয়ার সোনালি দাঁতের হাসি দেখার জন্য
ভাসতে-ভাসতে চলে যাবো এন সালভাদর।

আমার আফ্রিকান বন্ধুদের দেখতে দক্ষিণ আটলান্টিকের
জলে ভেসে ভেসে আমি কেপটাউন আর এডেন বন্দর ছুঁয়ে
কয়েকদিনের জন্য যাবো ঘানা, জিম্বাবুই আর জাম্বিয়ায়।
তারপর নিউ ইয়র্ক বন্দরের পথে আমি একটু জিরিয়ে নেবো
নিউ ফাইণ্ডল্যাণ্ডের তুষার-শীতল সবুজ শ্যাওলার নিচে।
বাল্টিমোর, মেরীল্যাণ্ড হয়ে পূরবীর হারানো স্মৃতির টানে
শুধু একরাত্রির জন্য আমি যাবো ফিলাডেলফিয়ায়।

এন্টার্কটিকায় যখন পেঙ্গুইন পাখিদের সঙ্গে দেখা হবে,
আমি তাদের কাছে বলবো আমার যাত্রাপথের গল্প।
তাদের আমি আবৃত্তি করে শোনাবো আমার কবিতাগুলো
তাদের আতিথ্যে মহানন্দে কাটিয়ে দেবো কয়েক বছর।

হ্যাঁ, আমি ইউরোপেও যাবো, যাবো ভার্সেই, বুদাপেষ্ট।
রাইন-দানিয়ুব-ভলগা-লেনার জলে ভাসতে-ভাসতে
আমি পৌঁছাবো দূর-প্রাচ্যে, খাবারভক্সে, সাইবেরিয়ায়।
ভেঙে-যাওয়া সোভিয়েট ইউনিয়ন আর আমার দোভাষিকা
সুন্দরী লেনা দোব্‌রাভ্‌স্কায়ার কথা ভাবতে-ভাবতে,
মেঘের মশারি টানিয়ে বৈকাল হ্রদের জলে দেবো দীর্ঘ ঘুম।
জাগবো না, যতক্ষণ না ইস্রাফিলের শিঙার ধ্বনিতে
গলতে শুরু করে অনন্ত বরফবীথি; যতক্ষণ না
পদার্থের বিক্রিয়ায় স্থলভাগ স্থান বদল করে
জল-ভাগের সঙ্গে।

মানুষ -নির্মলেন্দু গুণ

আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষগুলো অন্যরকম,
হাঁটতে পারে, বসতে পারে, এ-ঘর থেকে ও-ঘরে যায়,
মানুষগুলো অন্যরকম, সাপে কাটলে দৌড়ে পালায় ।

আমি হয়তো মানুষ নই, সারাটা দিন দাঁড়িয়ে থাকি,
গাছের মতো দাঁড়িয়ে থাকি।
সাপে কাটলে টের পাই না, সিনেমা দেখে গান গাই না,
অনেকদিন বরফমাখা জল খাই না ।
কী করে তাও বেঁচে থাকছি, ছবি আঁকছি,
সকালবেলা, দুপুরবেলা অবাক করে
সারাটা দিন বেঁচেই আছি আমার মতে । অবাক লাগে ।

আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষ হলে জুতো থাকতো,
বাড়ি থাকতো, ঘর থাকতো,
রাত্রিবেলায় ঘরের মধ্যে নারী থাকতো,
পেটের পটে আমার কালো শিশু আঁকতো ।

আমি হয়তো মানুষ নই,
মানুষ হলে আকাশ দেখে হাসবো কেন ?
মানুষগুলো অন্যরকম, হাত থাকবে,
নাক থাকবে, তোমার মতো চোখ থাকবে,
নিকেলমাখা কী সুন্দর চোখ থাকবে
ভালোবাসার কথা দিলেই কথা রাখবে ।

মানুষ হলে উরুর মধ্যে দাগ থাকতো ,
বাবা থাকতো, বোন থাকতো,
ভালোবাসার লোক থাকতো,
হঠাৎ করে মরে যাবার ভয় থাকতো ।

আমি হয়তো মানুষ নই,
মানুষ হলে তোমাকে নিয়ে কবিতা লেখা
আর হতো না, তোমাকে ছাড়া সারাটা রাত
বেঁচে থাকাটা আর হতো না ।

মানুষগুলো সাপে কাটলে দৌড়ে পালায়;
অথচ আমি সাপ দেখলে এগিয়ে যাই,
অবহেলায় মানুষ ভেবে জাপটে ধরি ।

শুধু তোমার জন্য- নির্মলেন্দু গুণ

কতবার যে আমি তোমোকে স্পর্শ করতে গিয়ে
গুটিয়ে নিয়েছি হাত-সে কথা ঈশ্বর জানেন।
তোমাকে ভালোবাসার কথা বলতে গিয়েও
কতবার যে আমি সে কথা বলিনি
সে কথা আমার ঈশ্বর জানেন।
তোমার হাতের মৃদু কড়ানাড়ার শব্দ শুনে জেগে উঠবার জন্য
দরোজার সঙ্গে চুম্বকের মতো আমি গেঁথে রেখেছিলাম
আমার কর্ণযুগল; তুমি এসে আমাকে ডেকে বলবেঃ
‘এই ওঠো,
আমি, আ…মি…।’
আর অমি এ-কী শুনলাম
এমত উল্লাসে নিজেকে নিক্ষেপ করবো তোমার উদ্দেশ্যে
কতবার যে এরকম একটি দৃশ্যের কথা আমি মনে মনে
কল্পনা করেছি, সে-কথা আমার ঈশ্বর জানেন।
আমার চুল পেকেছে তোমার জন্য,
আমার গায়ে জ্বর এসেছে তোমার জন্য,
আমার ঈশ্বর জানেন- আমার মৃত্যু হবে তোমার জন্য।
তারপর অনেকদিন পর একদিন তুমিও জানবে,
আমি জন্মেছিলাম তোমার জন্য। শুধু তোমার জন্য।

যাত্রাভঙ্গ-নির্মলেন্দু গুন

হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে
মন বাড়িয়ে ছুঁই,
দুইকে আমি এক করি না
এক কে করি দুই।

হেমের মাঝে শুই না যবে,
প্রেমের মাঝে শুই
তুই কেমন কর যাবি?
পা বাড়ালেই পায়ের ছায়া
আমাকেই তুই পাবি।

তবুও তুই বলিস যদি যাই,
দেখবি তোর সমুখে পথ নাই।

তখন আমি একটু ছোঁব
হাত বাড়িয়ে জড়াব তোর
বিদায় দুটি পায়ে,
তুই উঠবি আমার নায়ে,
আমার বৈতরণী নায়ে।

নায়ের মাঝে বসবো বটে,
না-এর মাঝে শোবো,
হাত দিয়েতো ছোঁব না মুখ
দুঃখ দিয়ে ছোঁব।

তোমার চোখ এতো লাল কেন? – নির্মলেন্দু গুণ

আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে , আমি চাই
কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক,
শুধু ঘরের ভেতর থেকে দরোজা খুলে দেবার জন্য ।
বাইরে থেকে দরোজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত ।

আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ আমাকে খেতে দিক । আমি হাতপাখা নিয়ে
কাউকে আমার পাশে বসে থাকতে বলছি না,
আমি জানি, এই ইলেকট্রিকের যুগ
নারীকে মুক্তি দিয়েছে স্বামী -সেবার দায় থেকে ।
আমি চাই কেউ একজন জিজ্ঞেস করুক :
আমার জল লাগবে কি না, নুন লাগবে কি না,
পাটশাক ভাজার সঙ্গে আরও একটা
তেলে ভাজা শুকনো মরিচ লাগবে কি না ।
এঁটো বাসন, গেঞ্জি-রুমাল আমি নিজেই ধুতে পারি ।

আমি বলছি না ভলোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন ভিতর থেকে আমার ঘরের দরোজা
খুলে দিক । কেউ আমাকে কিছু খেতে বলুক ।
কাম-বাসনার সঙ্গী না হোক, কেউ অন্তত আমাকে
জিজ্ঞেস করুক : ‘তোমার চোখ এতো লাল কেন ?’

কথা আছে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

বহুক্ষণ মুখোমুখি চুপচাপ, একবার চোখ তুলে সেতু
আবার আলাদা দৃষ্টি, টেবিলে রয়েছে শুয়ে
পুরোনো পত্রিকা
প্যান্টের নিচে চটি, ওপাশে শাড়ির পাড়ে
দুটি পা-ই ঢাকা
এপাশে বোতাম খোলা বুক, একদিন না-কামানো দাড়ি
ওপাশে এলো খোঁপা, ব্লাউজের নীচে কিছু
মসৃণ নগ্নতা
বাইরে পায়ের শব্দ, দূরে কাছে কারা যায়
কারা ফিরে আসে
বাতাস আসেনি আজ, রোদ গেছে বিদেশ ভ্রমণে।
আপাতত প্রকৃতির অনুকারী ওরা দুই মানুষ-মানুষী
দু‘খানি চেয়ারে স্তব্ধ, একজন জ্বলে সিগারেট
অন্যজন ঠোঁটে থেকে হাসিটুকু মুছেও মোছে না
আঙুলে চিকচিকে আংটি, চুলের কিনারে একটু ঘুম
ফের চোখ তুলে কিছু স্তব্ধতার বিনিময়,
সময় ভিখারী হয়ে ঘোরে
অথচ সময়ই জানে, কথা আছে, ঢের কথা আছে।

চোখ নিয়ে চলে গেছে .....................সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

এই যে বাইরে হু হু ঝড়, এর চেয়ে বেশী
বুকের মধ্যে আছে
কৈশোর জুড়ে বৃষ্টি বিশাল, আকাশে থাকুক যত মেঘ,
যত ক্ষণিকা
মেঘ উড়ে যায়
আকাশ ওড়ে না
আকাশের দিকে
উড়েছে নতুন সিঁড়ি
আমার দু বাহু একলা মাঠের জারুলের ডালপালা
কাচ ফেলা নদী যেন ভালোবাসা
ভালোবাসার মতো ভালোবাসা
দু‘দিকের পার ভেঙে
নরীরা সবাই ফুলের মতন, বাতাসে ওড়ায়
যখন তখন
রঙিন পাপড়ি
বাতাস তা জানে, নারীকে উড়াল দেয়ে নিয়ে যায়
তাই আমি আর প্রকৃতি দেখি না,
প্রকৃতি আমার চোখ নিয়ে চলে গেছে!

কেউ কথা রাখে নি ...........................সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

কেউ কথা রাখে নি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখে নি
ছেলেবেলায় এক বোষ্টুমী তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিলো
শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে
তারপর কতো চন্দ্রভূক অমাবস্যা চলে গেলো,
কিন্তু সেই বোষ্টুমী আর এলোনা
পঁচিশ বছর প্রতীক্ষায় আছি।

মামাবাড়ির মাঝি নাদের আলী বলেছিলো, বড় হও দাদাঠাকুর
তোমাকে আমি তিনপ্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবো
সেখানে পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর
খেলা করে!
নাদের আলী, আমি আর কতো বড় হবো? আমার মাথা এ ঘরের ছাদ
ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর তুমি আমায়
তিনপ্রহরের বিল দেখাবে?

একটাও রয়্যাল গুলি কিনতে পারি নি কখনো
লাঠি-লজেন্স দেখিয়ে দেখিয়ে চুষেছে লস্করবাড়ির ছেলেরা
ভিখারীর মতন চৌধুরীদের গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছি
ভিতরে রাস-উৎসব
অবিরল রঙের ধারার মধ্যে সুবর্ণ কঙ্কণ পরা ফর্সা রমণীরা
কত রকম আমোদে হেসেছে
আমার দিকে তারা ফিরেও চায় নি!
বাবা আমার কাঁধ ছুঁয়ে বলেছিলেন, দেখিস, একদিন, আমরাও…
বাবা এখন অন্ধ, আমাদের দেখা হয়নি কিছুই
সেই রয়্যাল গুলি, সেই লাঠি-লজেন্স, সেই রাস-উৎসব
আমায় কেউ ফিরিয়ে দেবেনা!

বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুণা বলেছিলো,
যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালোবাসবে
সেদিন আমার বুকেও এ-রকম আতরের গন্ধ হবে!
ভালোবাসার জন্য আমি হাতের মুঠেয়ে প্রাণ নিয়েছি
দুরন্ত ষাড়ের চোখে বেঁধেছি লালকাপড়
বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টা নীলপদ্ম
তবু কথা রাখে নি বরুণা, এখন তার বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ
এখনো সে যে-কোনো নারী।

কেউ কথা রাখে নি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখে না!

Tuesday, October 22, 2013

পাখি-সব করে রব

পাখী-সব করে রব, রাতি পোহাইল।
কাননে কুসুমকলি, সকলি ফুটিল।।
রাখাল গরুর পাল, ল'য়ে যায় মাঠে।
শিশুগণ দেয় মন নিজ নিজ পাঠে।।
ফুটিল মালতী ফুল, সৌরভ ছুটিল।
পরিমল লোভে অলি, আসিয়া জুটিল।।
গগনে উঠিল রবি, লোহিত বরণ।
আলোক পাইয়া লোক, পুলকিত মন।।
শীতল বাতাস বয়, জুড়ায় শরীর।
পাতায় পাতায় পড়ে, নিশির শিশির।।
উঠ শিশু মুখ ধোও, পর নিজ বেশ।
আপন পাঠেতে মন, করহ নিবেশ।।
আমার সারাটা দিন মেঘলা আকাশ
বৃষ্টি তোমাকে দিলাম!
শুধু শ্রাবন-সন্ধ্যা টুকু তোমার কাছে
চেয়ে নিলাম!
আমার সারাটা দিন মেঘলা আকাশ......

হৃদয়ের জানালায় চোখ মেলে রাখি
বাতাসের বাঁশিতে কান পেতে থাকি!
তাকে কাছে ডেকে
মনের আংগিনা থেকে
বৃষ্টি তোমাকে তবু
ফিরিয়ে দিলাম।

তোমাকে হাতেই হোক রাত্রি রচনা
এ আমার স্বপ্ন সুখের ভাবনা।
চেয়েছি পেতে যাকে
চাইনা হারাতে তাকে
বৃষ্টি তোমাকে তাই
ফিরে চাইনা ... ...